Saturday, July 2, 2011

ডাক্তার সাহেবদের কান্ডজ্ঞান ৪

ডাক্তার সাহেবদের নামের শেষে যত ডিগ্রী থাকে পৃথিবীর আর কোন পেশার লোকের থাকে কিনা আমার জানা নেই। যার যত বড় বড় দেশ বিদেশী ডিগ্রী আছে তিনি তত বড় ডাক্তার বলে আমরা সবাই মনে করি। আর আমরা মনে করি বলেই, ডাক্তার রা তা তার নামের শেষে যোগ করে দেন (ভাল ডাক্তার চিনতে আমাদের যেন কষ্ট না হয়!)। আমি ভুল বলছি জনাব, নামের শেষে শুধু শিক্ষার পদবী নয়, বহুকাল আগে থেকে তারা আরো কত গুলো লেখা লাগিয়ে আসেন তা হচ্ছে, তিনি ইতি পুর্বে কোথায় কোথায় কাজ করেছেন! প্রাক্তন অধ্যাপক (ওমুক মেডিক্যাল কলেজ), বিভাগীয় প্রধান (ওমুক বিভাগ, তেমুক হাসপাতাল), সিনিয়র কনসাল্টেন্ট (তমুক হাসপাতাল, ঢাকা) সহ ইত্যাদি এবং সর্বশেষ ফ্রান্স, জাপান, ভারত, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে দ্যাস বিষয়ে প্রশিক্ষনপাপ্ত! আমার কথা মিথ্যা মনে হলে আপনি একজন নাম করা ডাক্তারের ভিজিটিং কার্ড হাতে নিয়ে দেখতে পারেন। ‘নাম করা’ বা ‘বিখ্যাত’ মানে যিনি দিনে ৮০/৯০ জন রোগী দেখেন!

আসলে যত যাই বলুন না কেন, কিংবা যত ডিগ্রী থাক না কেন আসল কথা হচ্ছে শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতা। একজন ডাক্তার কে আজীবন পড়াশুনা মানে শিক্ষা গ্রহন করতে হয় এবং পাশাপাশি তাকে প্যাক্টিক্যাল কাজ করে করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। শুধু পড়াশুনা করলেই ভাল ডাক্তার হওয়া যায় না যদি না ওই বিষয়ে যথেষ্ট প্যাক্টিক্যাল অভিজ্ঞতা না থাকে। তবে অভিজ্ঞতা একটা বিরাট ব্যাপার। চিকিৎসা করার জন্য অভিজ্ঞতা একটা জরুরী ব্যাপার, হাতে কলমে যদি কোন ডাক্তার উক্ত কাজটা না করেন তবে তিনি উক্ত বিষয়ে ভাল করতে পারেন না। ডাক্তারী পাশের পর এজন্য ইন্টানীশীপ করতে হয়, যাতে তিনি বিষয় গুলো হাতে কলমে এবং নিজ চোখে দেখেন। 

অর্থ দাঁড়ায়, একজন ডাক্তার তবেই একজন ভাল ডাক্তার হয়ে উঠেন যখন তিনি উক্ত বিষয়ে যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করেন। বিশেষ করে রোগীর অপারেশন জনিত ব্যাপারে ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা একদম জরুরী বিষয়। যে সকল ডাক্তার পুর্ব থেকেই অভিজ্ঞ তাদের সাথে কাজ করে করে এই বিদ্যা অর্জন করতে হয়। নানামুখী চিন্তায় ডাক্তারীটা আমার কাছে অনেকটা গুরুমুখী বিদ্যা বলে আমার মনে হয় (যদি আমার দেখা ভুল না হয়ে থাকে)। ভাল গুরু’র (ডাক্তার) কাছে থেকে একজন সাধারন নূতন পাশ করা ডাক্তারও অপারেশন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দিতে পারে।

তা হলে হিসাব হচ্ছে, একজন ভাল ডাক্তার বনে গেলে তার উচিত হচ্ছে অন্য ডাক্তাদের কিংবা তার অধীনস্থ জুনিয়রদের শিক্ষা দেয়া। বিশেষ করে তিনি যখন প্রতিদিন ৩/৪টা বড় অপারেশন করেন! এই অপারেশনের সময় তিনি জুনিয়র ডাক্তারদের কাছে রেখে শিক্ষা দিলে দুটো কাজের কাজ হবে – ১। এই গরীব দেশের সাধারন মানুষের উপকার অর্থ উক্ত চিকিৎসার চিকিসক বাড়বে ২। উক্ত ভাল চিকিৎসক তার নাম এই পৃথিবীতে দ্বিতীয় জেনারেশনে লিখে যেতে পারেন।

কিন্তু না, এমন কাজ আমি কোথায়ও দেখি না। ভাল চিকিৎসকরা নবীন চিকিৎসকদের কাছেই টানেন না। এমন এক হিংসার দেয়াল তুলে দেন যাতে করে উক্ত ডাক্তার যখন অপারেশন কররেন তখন তার কাছে কোন ডাক্তারই না থাকে। এমন হচ্ছে আমাদের এই হাসপাতালে। তিনি (তার বেশী ডিগ্রী নাই, নামের শেষে লিখেন এমবিবিএস, এমএস ) না থাকলে এই হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যাবে এট আমি নিশ্চিত। দিনে ৩/৪ টা অপারেশন করেন, প্রতি অপারেশনে যতদুর জানি তিনি নেন হাজার চল্লিশেক টাকা। (দিন, মাস, বছরে তিনি কত টাকা রুজি করেন তার হিসাব আপনারা বের করেন, আমি পারব না)। অপারেশনে তিনি কিছু সহকারী নিয়েই কাজ সমাধা করে ফেলেন। তার হাত এতই ভাল যে, মৃত্যুর হার নেই বললেই চলে! (বিষয় ও আরো নানা দিক আমি গোপন করে গেলাম, বেশী বললে আপনারা চিনে ফেলবেন!)

তিনি হয়ত মনে করেন তার বিদ্যাটা যদি অনেক শিখে যায় তবে তার ইনকামে ভাগ বসাবে কিংবা তার চেয়ে অন্য কোন ডাক্তার ভাল নাম কামিয়ে তাকে এই পথ থেকে আউট করে দিবে! হা হা হা…।।

কোটি কোটি টাকা কামিয়েও এখনো নিজের কান্ডজ্ঞান উন্নত করতে পারেন নাই, পারেন নাই সাধারন মানুষকে ভালবাসতে।

No comments:

Post a Comment